মাসে পাওয়া যাচ্ছে ৮৫টি মৃতদেহ
দেশের রেলপথে মৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ৮৫টি মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে রেললাইনের কাছ থেকে। ২০২৪ সালে সারা দেশে রেলপথ থেকে এক হাজার ১৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ৭৯৪ জন পুরুষ এবং ২২৩ জন নারী ছিল। এসব লাশ উদ্ধার হওয়ার পর ৯৯৮টি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে তদন্ত শেষে ৬টি মামলা খুনের অভিযোগে রূপান্তরিত হয়েছে, জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
রেলপথের মৃত্যুজনিত কারণগুলো অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে ৫০ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে চলন্ত ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে। ওই সংখ্যা ৫০৪ জন। আর ২৭২ জন মারা গেছেন অসতর্কভাবে লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময়। রেলপথের অনেক অরক্ষিত লেভেলক্রসিংও মৃত্যুর একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গত বছর ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২৩ জন মারা গেছেন, ইয়ারফোন ব্যবহার করার কারণে রেলপথে চলাচল করতে গিয়ে ৭৬ জন এবং অন্যান্য কারণে ১৪২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) রেলপথ থেকে ১৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া রেলপথে মৃত্যুর মধ্যে রয়েছে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ, সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় বা কাটাতে পড়া, চলন্ত ট্রেনে ওঠানামার সময় ভারসাম্য হারানো, কানে হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে রেলপথে হাঁটা, ট্রেনের দরজায় ঝুলে যাওয়া, রেলপথে বসে থাকা, অসতর্কভাবে রেললাইন পার হওয়া এবং বগির সংযোগস্থলে বসে থাকা।
তবে, প্রকৃত ঘটনার আড়ালে কখনো কখনো অপরাধীরা রেলপথে মৃতদেহ ফেলে দিয়ে সেগুলোকে দুর্ঘটনা হিসেবে প্রচার করতে চায়। অনেক সময় এ ধরনের ঘটনা হত্যা হিসেবে সন্দেহ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে রেলপথ থেকে ৫ হাজার ৩৬২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮১টি হত্যাকাণ্ডের শিকার হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া দেশে অনেক রেলপথের অরক্ষিত লেভেলক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে কিছুতে গেটম্যান এবং সিগন্যাল বার নেই। এতে জনগণ প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে রেলপথ পার হচ্ছেন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান রেললাইন দিয়ে রাস্তা তৈরি করে, তবে সেটি রেল বিভাগের অনুমতি নিয়ে করা উচিত, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেভেলক্রসিং অরক্ষিত থাকে।
রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক তোফায়েল আহমেদ মিয়া জানান, লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে আলামত বিশ্লেষণ করা হয় এবং মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। রেলওয়ে পুলিশ সাম্প্রতিক সময়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta