প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ক অ্যাডভাইজরি টিম আজই গঠন হবে
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একাধিক পদ্ধতির প্রয়োজন। এই জন্য আজকের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বুধবার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশ পর্যালোচনা করে দেখেছি, ১১৫টি দেশে তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে ভোট, এরপর পোস্টাল ব্যালট এবং তার পরবর্তী অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতিতে, দূতাবাসে ভোটিং সীমিত হয়ে যায়। তাই আমরা তিনটি পদ্ধতি শর্টলিস্ট করেছি: পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন এবং প্রক্সি ভোটিং। প্রত্যেকটি পদ্ধতির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। কমিশনের কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরার পর, নির্বাচন, আইন, কারিগরি এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ১০টি টিম তাদের উপস্থাপনা উপস্থাপন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা এবং অসুবিধা পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমাদের যে পদ্ধতিই চূড়ান্ত করা হোক না কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসী জনগণের বিস্তৃতি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। যে পদ্ধতিতেই ভোট গ্রহণ করা হোক, প্রবাসী ভোটারদের প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য একক কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়, বরং মিশ্র পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ একেক দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রত্যেক পদ্ধতির সফলতা এবং দুর্বলতা রয়েছে। সব পদ্ধতির জন্য মক টেস্টিংয়ের প্রয়োজন হবে, এবং সম্ভবত সব পদ্ধতিই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে প্রয়োগ করা হবে, যা অনেক দেশ ইতিমধ্যেই করছে।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, অনলাইন ভোট এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। অনেক দেশ এটি চার-পাঁচ বছর ধরে চালাচ্ছে। কর্মশালায় আলোচ্য পদ্ধতিগুলিকে আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে একটি অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করা, যারা তিনটি পদ্ধতির সফলতা এবং দুর্বলতা পর্যালোচনা করবে এবং তা সংশোধন করার উপায় খুঁজে বের করবে। এরপর আমরা অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হবে, সময়ের মধ্যে এই প্রক্রিয়া কাস্টমাইজ করে বাস্তবায়ন করা।
তিনি আরও বলেন, প্রক্সি ভোট নিয়ে আমরা বলেছি, যদি আমরা প্রবাসী ভোটারদের বৃহৎ অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তবে প্রক্সি একমাত্র উপায়। তবে আমরা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করব, তা পরবর্তী কার্যক্রমে চূড়ান্ত হবে। কমিশনের অবস্থান এ বিষয়ে এখনো অপরিবর্তিত, প্রক্সি ভোটের বিষয়ে যা যা দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোন একটি একক পদ্ধতি কার্যকর হবে না। কম্বিনেশন পদ্ধতির দিকে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রক্সি ভোটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু দেশ সব ভোটারের জন্য প্রক্সি ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছে, যেমন নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, এবং যুক্তরাজ্য। তবে কিছু দেশে বিশেষ ক্যাটাগরি (যেমন গর্ভবতী, কারাগারে বন্দি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী) ছাড়া অন্যদের জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের জন্য যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে, সব পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং এসব সীমাবদ্ধতা কমানোর চেষ্টা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে, ইসি সানাউল্লাহ বলেন, কমিশন থেকে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, সবাই নিজেদের মতামত প্রকাশ করুক। এজন্য আমরা কর্মশালা করেছি যাতে গবেষকরা বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে উপকারিতা এবং অসুবিধাগুলি তুলে ধরতে পারে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে উপস্থাপনা দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বৃহত্তর পরিসরে প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা, এবং প্রক্সি ভোটিংয়ের মাধ্যমে এই কাজ করা। তবে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। আমরা অ্যাডভাইজরি টিমের পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
তিনি বলেন, সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কত সময় লাগবে। তারপর আমরা এটি নির্ধারণ করতে পারব। কমিশন পোস্টাল এবং অনলাইন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে, তারা ট্রায়ালের জন্য আটটি ধাপের কথা বলেছেন। তবে ট্রায়াল কতদিন চলবে, তা কারিগরি বিশেষজ্ঞরা জানাতে পারবেন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta