প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করবেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি বিশ্বের বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে ২০২৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমে যেতে পারে। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার, মুদ্রাবাজার এবং স্বর্ণবাজারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন নেতা, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে সাধারণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
গত শনিবার থেকে মার্কিন বন্দরে আসা সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক কেটে নেয়া শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস গত রাতে জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, বাংলাদেশি প্রশাসন শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করা হবে। শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি আকস্মিক নয় এবং এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেই তারা মনে করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। আগের শুল্ক ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। মার্কিন প্রশাসন দাবি করেছে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে পাল্টা শুল্ক হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শুল্ক হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যেমন পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, ভারতের ২৬ শতাংশ, চীনের ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৪৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ৩৬ শতাংশ এবং তাইওয়ানের ৩২ শতাংশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমে যাবে। এটি পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে শুল্কযুদ্ধের চক্রের সূচনা করতে পারে। এই পদক্ষেপে বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে, বিশেষ করে চীনের সাথে মার্কিন বাণিজ্য।
চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর, বিশ্ববাজারে শেয়ারবাজার, তেল ও সোনা সহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মূল্য কমে গেছে। ওয়াল স্ট্রিটে ব্যাপক দরপতন হয়েছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের কোম্পানিগুলো ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে।
মার্কিন শুল্ক নীতির প্রভাব ডলারের মানের উপরও পড়েছে। শুল্ক আরোপের কারণে আমেরিকানদের ব্যয় বেড়ে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং ডলারের সূচক কমেছে।
মার্কিন শুল্ক নীতির ফলে সোনার দামেও হ্রাস এসেছে, যা আগের সর্বোচ্চ মূল্য থেকে কমে এসেছে। ডব্লিউটিও মহাপরিচালক সতর্ক করেছেন যে, মার্কিন শুল্কের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
বিশ্বের ৭৪% বাণিজ্য এখন ডব্লিউটিওর ‘মোস্ট ফেবারড ন্যাশন’ (এমএফএন) শর্তে পরিচালিত হয়। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে এই শর্তের আওতায় বাণিজ্যের হার কমে গেছে। ডব্লিউটিও সদস্যদের একত্র হয়ে বাণিজ্য বিরোধ মোকাবিলা এবং সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta