ব্যাংক ও আর্থিক খাত ধ্বংসের দায়ী লোটাস কামাল
বাংলাদেশের সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি লোটাস কামাল নামে পরিচিত, মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংক খাতকে ভয়াবহ সংকটে ফেলেছেন। তাঁর সময়কালে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা এবং নিয়ম-নীতি ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নানাভাবে ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছেন, যেগুলো এখন খেলাপি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ১০.৩০ শতাংশ। তিনি যখন দায়িত্ব ছাড়েন, তখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এসব ঋণের পুনঃতফসিল, ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা এবং নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে দেখানোর ব্যবস্থা তাঁর সময়কালে ছিল ব্যাপক। তাঁর মন্ত্রিত্বের সময়ে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বাড়ে, যার ফলে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি, মুস্তফা কামাল নিজেই জানিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ আর বৃদ্ধি পাবে না।
কিন্তু বাস্তবে তিনি নিজেই ঋণখেলাপি হয়ে বসেছিলেন। সোনালী ব্যাংক থেকে লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মালিক আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী এবং মেয়ের নামে ঋণ ছিল। তবে পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল মুস্তফা কামালের হাতে। সোনালী ব্যাংক থেকে কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যার কিস্তি ২৭ লাখ টাকা প্রতি মাসে।
কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ না করার কারণে ঋণটি খেলাপি হয়ে যায়। এরপরেও সোনালী ব্যাংক তাদেরকে নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম বিষয়টি লক্ষ্য করে। তবে শোনা যাচ্ছে, লোটাস কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
২০১০ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি মামলায় লোটাস কামালের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। তিনি তখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে যে, শেয়ারবাজারের কারসাজিতে তিনি অনেক মানুষের পুঁজি লুটে নিয়েছেন।
২০১০ সালের শেয়ারবাজার কারসাজিতে তার পকেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা গেছে বলে তদন্তে জানা যায়। এছাড়া প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে।
গত ২২ আগস্ট, মুস্তফা কামাল এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়, তবে সে সময়েই তিনি তার টাকাসহ অন্যান্য সম্পদ সরিয়ে ফেলেন।
বর্তমানে, সোনালী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে তার ঋণ পরিশোধ বাকি রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে না। পদ্মা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় এখনও ঋণের কিছু পরিমাণ বকেয়া রয়েছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta