পৃথিবীর সমস্ত নিষ্ঠুরতা অতিক্রম করেছেন হাসিনা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতাকে অতিক্রম করেছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন পড়ে সবার গা শিউরে উঠেছে। এটা কত ভয়াবহ! কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী তার দেশের নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে লাশ লুকানোর নির্দেশ দিতে পারেন! ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতাকে ছাড়িয়ে গেছেন—এটি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মহান স্বাধীনতা দিবস এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন। তার সঙ্গে আমি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গা শিশু, নারী, পুরুষ এবং কিশোরদের সঙ্গে ইফতার করেছি। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করা হবে। মালয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ড সম্মেলন আয়োজনের জন্য এগিয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জুলি বিশপকে আমি আহ্বান জানিয়েছি এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় নেতৃত্ব দিতে, তিনি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং তরুণদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সকলেই জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসের রিপোর্টে স্বৈরাচারের নিপীড়নের বর্ণনা উঠে এসেছে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার উপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার বিস্তারিত তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার জন্য। আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি একত্রে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু ছিল। বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকার কারণে, আমাদের জুলাই-কন্যাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রমণ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রতিবেদনে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে।
আরএস
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta