একদল নারী শ্রমিকের প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধের কাহিনী
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে সন্ধ্যার পর গড়ে ওঠে একটি অস্থায়ী বসতি। দিনের পরিশ্রম শেষে রসুন তুলতে আসা ক্লান্ত নারী শ্রমিকরা এখানে জড়ো হন। তারা একত্রে রান্না করেন এবং একসাথে খেয়ে, খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান। উপজেলার কাছিকাটা ও হাঁসমারী এলাকায় এমন দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যায়। সন্ধ্যা নামলেই মহাসড়কের পাশে এক নতুন ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।
সারি সারি চুলায় আগুন জ্বলে উঠে, ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠতে থাকে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোনো উৎসবের আয়োজন হচ্ছে, তবে এটি বাস্তবে একদল পরিশ্রমী নারী শ্রমিকের দৈনন্দিন সংগ্রামের চিত্র।
স্থানীয়রা জানান, এই নারী শ্রমিকরা মূলত তাড়াশ, চাটমোহর ও পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে আসেন। তারা দিনে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করার পর মহাসড়কের পাশে তাদের অস্থায়ী আবাসে ফিরে যান। কিন্তু এত কষ্টের পরও তারা পান মাত্র কয়েকটি টাকা মজুরি।
তাড়াশ থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক ইলা মিত্র জানান, ‘সারাদিন রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করি, সন্ধ্যায় এসে রান্নার ব্যবস্থা করি। একসাথে খাই, তারপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমাই অথবা মাথার উপরে পলিথিন টাঙ্গিয়ে থাকি। কিন্তু কাজের পরিমাণ অনুযায়ী মজুরি খুবই কম, সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।’
আরেক নারী শ্রমিক জানান, ‘আমাদের থাকার জন্য কোন ভালো জায়গা নেই। অনেক সময় রাতের বেলা ভয় লাগে, কারণ এখানে নিরাপত্তা নেই।’
স্থানীয় বাসিন্দা জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘এই নারী শ্রমিকদের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। সংসার চালাতে তারা প্রায় সব সময় গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজ করতে চলে যান। তবে মহাসড়কের পাশে বাস করার কারণে নিরাপত্তাহীনতা তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘কৃষির কাজে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে, তবে তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন আজও হয়নি। অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা পায় না। সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা বা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই। তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, ন্যায্য মজুরি এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, ‘গুরুদাসপুরে এই ধরনের নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কষ্টকর, তবে তারা থেমে নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘গুরুদাসপুরে মৌসুমী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসন নজর রাখছে।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta