নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান অসহায়
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণির মানুষ এখন একটি মুক্ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। তাছাড়া শর্টটার্ম, মিডটার্ম বা লংটার্ম সিদ্ধান্ত নিতে এখন কেউ সক্ষম নয়। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আসবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- শফিউল আলম দোলন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ১৬ বছর ধরে দেশের জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। জনগণ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এটি একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমেই সম্ভব। দেশের জনগণ এখন এই অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবাই নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। নির্বাচিত সরকার এলে তারা শর্টটার্ম, মিডটার্ম, এবং লংটার্ম সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ব্যবসায়ীরা বা বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যতক্ষণ না নির্বাচন হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের প্রতি আস্থা থাকে, ফলে তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কেমন চলছে এবং ব্যবসায়ীদের অবস্থা কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভালো নয়। কারণ তারা শর্টটার্ম সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম। ব্যবসায়ীরা নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন, কারণ নির্বাচিত সরকার না হলে তারা লংটার্ম ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু শর্টটার্ম উদ্যোগ নিতে পারে, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সরকার। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ব্যবসায়ীদের জন্য এটি আদর্শ পরিবেশ নয়। তারা রাজনৈতিক সমর্থন পেলে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনের জন্য টাইমফ্রেম কী? আপনার মতে, কবে হতে পারে নির্বাচন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ পরিস্থিতি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। নির্বাচনের জন্য শুধু কথা বললেই হবে না, এর একটি স্পষ্ট রোডম্যাপও থাকতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনের পর বিএনপি ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি সঠিক কি না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি সঠিক। বিএনপি মোনাফেকের দল নয়। বিএনপি যা বলে তা করে। আমরা যে আন্দোলন করেছি, ৩১ দফা ঘোষণা করেছি, নির্বাচনের পর ঐকমত্যের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : যাদের সাথে আন্দোলন করেছেন, তাদের কেউ ডিগবাজি দিয়েছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : তারা সবাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ ডিগবাজি খায়নি। যারা ডিগবাজি খেয়েছে, তারা নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকার বলেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি তার ব্যক্তিগত মতামত। তিনি যা বলেছেন, জনগণ সেটি বিবেচনা করবে। এই ধরনের কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা কি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন?
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার দল নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। জনগণের ওপর আস্থা রেখেই বিএনপি নির্বাচন করবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : পুলিশের কার্যক্রম সন্তোষজনক কি না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ১৫-১৬ বছর আন্দোলন করেছে। শেখ হাসিনা যেভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, তা জনগণ মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জামায়াতে ইসলামী আনুপাতিক হার পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, আপনার দল একমত কি না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এখন আনুপাতিক হার পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে পরবর্তীতে যদি কেউ চায়, তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : প্রস্তুতি শেষে জাতীয় কাউন্সিল হবে এবং সময় এলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপি মাইনাস করার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : যারা মাইনাস করতে চায়, তারা শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছে। জনগণের আস্থা হারানো রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে পারেন না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। তবে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই দলকে অনেকে ‘কিংস পার্টি’ মনে করছে, আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জনগণ তাদের বিচার করবে। যে দল যেমন কাজ করবে, জনগণ তাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta