আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় আজ ঘোষণা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ বর্তমানে একটি মুক্ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই অবস্থায় কোনো ধরনের শর্টটার্ম, মিডটার্ম কিংবা লংটার্ম সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন, কারণ নির্বাচিত সরকার না থাকায় তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- শফিউল আলম দোলন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : দেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যস্ত, তাদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য। জনগণ এখন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, এবং এই প্রক্রিয়া কেবল একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণতা পাবে। দেশের সমস্ত মানুষ এখন নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। একইভাবে, অর্থনীতিতেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশের ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন, কারণ নির্বাচিত সরকার আসলে তারা শর্টটার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারা একমাত্র এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সমর্থন ও সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে সক্ষম হন, এবং কেবল নির্বাচিত সরকারেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যবসায়ীদের অবস্থা কেমন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ব্যবসায়ীরা ভালো অবস্থায় নেই। কারণ তারা শর্টটার্মে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আর শর্টটার্ম, মিডটার্ম, লংটার্ম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তারা সবাই এখন নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। অবশ্যই, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সাময়িক পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে এসব পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান নয়। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, আর এভাবে কোনো সুস্থ ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তবে ইন্টারিম গভর্নমেন্ট সীমাবদ্ধতা সহকারে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিতে পারবে না। সুতরাং, ব্যবসায়ীরা চাইছেন নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান আসুক।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে? আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেখতে পাচ্ছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব হতে পারে। তবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করা উচিত, কারণ বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত (ফ্লুইড সিচুয়েশন)। নির্বাচন কেবল মুখে বলা নয়, এর জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দরকার।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করার পরিকল্পনা করেছে। আপনি কি একমত?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এর মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। বিএনপি কখনো মোনাফেকের দল নয়, আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। আমাদের অন্যান্য অংশীদার দলের সঙ্গে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি, নির্বাচনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করে এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : যাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন, তারা কি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : তারা সবাই ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছে। কেউই অবস্থান পরিবর্তন করেনি। যারা পরিবর্তন করবে, তাদেরই ক্ষতি হবে, আমাদের বা দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। অতীতে যারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে, তারা নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : একজন সরকারি উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ক্ষমা চাওয়ার শর্তে সুযোগ দেয়া হবে। আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি তার ব্যক্তিগত মতামত। জনগণই এর মূল্যায়ন করবে। নানা সময় নানা ধরনের বক্তব্য আসছে, তবে এসব কোনোকিছু নির্ধারণ করে না। যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদেরই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না? স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা উচিত হবে কি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ আমরা বিশ্বাস করি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এই সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা, যা দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম সন্তোষজনক কি না?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনে কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান শুধু নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সম্ভব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জাতীয় নির্বাচনে কোনো অনিশ্চয়তা বা ষড়যন্ত্র দেখছেন কি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : দেশের মানুষ ১৫-১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ হাসিনা যেভাবে নির্বাচনে ক্ষমতায় টিকে ছিল, তেমনভাবে কেউ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ তা কখনোই মেনে নেবে না। এমনকি তাদেরও দায়িত্বের সাথে বিদায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জামায়াতে ইসলামী আনুপাতিক নির্বাচনের পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। আপনার দল কি একমত?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বর্তমানে আনুপাতিক নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। তবে ভবিষ্যতে যদি কেউ এটি চায়, তবে তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন কবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জাতীয় কাউন্সিল যথাযথ প্রস্তুতির পর অনুষ্ঠিত হবে। আর সময় আসলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরে আসবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : যারা ‘মাইনাস টু’ পরিকল্পনা করেছিল, তারা এবার ‘মাইনাস বিএনপি’ এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে- আপনি কী ভাবছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : যারা ‘মাইনাস’ করতে চেয়েছে, তারা সবাই শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা এটি করেছে, তারা এখন কোথায়? শেখ হাসিনা যেভাবে জনগণের আস্থা হারিয়েছে, তারও বিদায় নিতে হবে। রাজনীতি হচ্ছে জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্থান, এবং যারা মাইনাস করার চেষ্টা করে তারা রাজনীতি করতে পারে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি। ছাত্রদের দ্বারা রাজনৈতিক দল গঠন খুবই স্বাভাবিক। আমরা এটি স্বাগত জানাই, তবে তাদের উচিত জনগণের আস্থা অর্জন করা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : “এ দলকে অনেকেই কিংস পার্টি মনে করছে”- আপনি কী ভাবছেন? আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জনগণই ঠিক করবে তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করবে। যে দল যেভাবে কাজ করবে, জনগণ তাদের সেভাবেই গ্রহণ করবে। এতে আমার কোনো মন্তব্য করার জায়গা নেই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta