সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রকম্পিত সার্বিয়া
আগাম নির্বাচনের দাবিতে সার্বিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে রাজধানী বেলগ্রেডের রাজপথে নেমেছেন হাজারো মানুষ। রোববার (২৯ জুন) বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় জড়ো হন।
শনিবার (২৮ জুন) থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। সেদিন বেলগ্রেডে বড় সমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এসময় অনেককে গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভকারীরা বেলগ্রেডের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সাভা নদীর ওপর একটি সেতু অবরোধ করেন। ধাতব ব্যারিকেড, ডাস্টবিন ও অন্যান্য বস্তু ব্যবহার করে তৈরি করেন প্রতিবন্ধকতা। একই সময়, নভি সাদে শাসকদলের কার্যালয়ের সামনে ডিম নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ জানানো হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দেশজুড়ে ছোট ছোট শহরেও বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে।
রোববারের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল আগের দিন গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের মুক্তি। জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
টানা আট মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেন এবং সহিংসতার দায় সরকারের ওপর চাপান।
সমাবেশ শেষে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। দাঙ্গা পুলিশ লাঠিচার্জ, পিপার স্প্রে ও ঢাল দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইট, বোতলসহ বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করেন।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ৪৮ জন পুলিশ আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ জন বিক্ষোভকারী। মোট ৭৭ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ৩৮ জন এখনও হেফাজতে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিচা ডাচিচ।
পাবলিক প্রসিকিউটরস অফিস জানিয়েছে, রোববার আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার প্রেসিডেন্ট ভুচিচ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন এবং বলেন, আন্দোলনকারীরা সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভ্লাদান জকিচ, যিনি আন্দোলনের নেতাদের একজন, তাকেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন ভুচিচ। বলেন, "আরও গ্রেপ্তার হবে, সবাইকে শনাক্ত করা হচ্ছে।"
গত নভেম্বর নভি সাদে নতুন রেল স্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই সার্বিয়ায় আন্দোলন জোরদার হয়। জনগণ এ ঘটনার জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতাকে দায়ী করে। কিন্তু ভুচিচ আগাম নির্বাচনের দাবি নাকচ করে জানান, পরবর্তী নির্বাচন ২০২৭ সালেই হবে।
ভুচিচ বলেন, “সার্বিয়া বিজয়ী হয়েছে। সহিংসতা দিয়ে আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। তারা রক্তপাত চেয়েছিল, এখন তাদের জবাবদিহি করতে হবে।”
সমালোচকদের মতে, এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর ভুচিচ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। যদিও এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদ লাভের চেষ্টা করলেও সার্বিয়ার সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে।
সূত্র: এপি
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta