ইরানের বিরুদ্ধে জয় দাবি করেছেন নেতানিয়াহু, কিন্তু জরিপে দেখা গেছে অনেক ইসরায়েলি তার ওপর বিশ্বাস করেন না।
মার্চ মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতি আনার প্রস্তাব থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পেছনে সরে গিয়েছিলেন, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে একটি রাজনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়নি, কিন্তু তার দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তির মাধ্যমে হামাস বন্দিদের মুক্তি পায় এবং বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়।
তবে, সেই শান্তি প্রক্রিয়াটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। যুদ্ধ থামানোর এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা থাকলেও, নেতানিয়াহু আবার গাজায় হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি ঘোষণা করেন, “হামাস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলতেই থাকবে।” এর ফলে গাজার বাকি বন্দিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন গৌণ হয়ে যায়, আর বেসামরিক লোকদের দুর্দশা তেমন গুরুত্ব পায়নি।
অনেক ইসরায়েলি, বিশেষ করে বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, নেতানিয়াহু তাদের স্বজনদের নিরাপত্তা এবং জাতির কল্যাণের চেয়ে তার রাজনৈতিক অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে তিনি একটি বিচ্ছিন্ন সরকার পরিচালনা করছেন, যা মূলত চরম-ডানপন্থি এবং কট্টর ধর্মীয় দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এই অবস্থায় তিনি আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছেন এবং নিজেকে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে চান বলে জানান।
গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু বলেন, “আমার এখনও অনেক কাজ বাকি আছে, এবং যতদিন দেশবাসী আমাকে চান, আমি দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতে চাই।” একই সঙ্গে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নির্মূলের দাবি একটি ‘সুযোগের জানালা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নেতানিয়াহু বলেন, গাজা থেকে বন্দিদের মুক্তি এবং হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করা তার মিশন, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ঐক্যের ওপর নির্ভরশীল।
তবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা তার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাত থেকে তিনি প্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি। ইসরায়েলের মা’আরিভ সংবাদপত্রের জরিপ অনুযায়ী, ১২০ আসনের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য জোট গঠন অপরিহার্য। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লিকুদ পার্টি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, এবং ছোট ডানপন্থি দলগুলোর সমর্থনও চ্যালেঞ্জের মুখে।
একই জরিপে ৫৯ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করেন, বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। অন্যদিকে ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মূল কারণ তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ।
ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক তামার হারম্যান বলেন, “নেতানিয়াহু একজন দক্ষ রাজনৈতিক খেলোয়াড়, যাকে ছাড়িয়ে আর কেউ নেই।” তবে তিনি বলেন, “বিশ্বাসের অভাব তার বড় সমস্যার কারণ। ক্ষমতার জন্য বারবার অবস্থান পরিবর্তন করায় অনেক ইসরায়েলি তার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন।”
হারম্যানের মতে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের পূর্ণ বা আংশিক আস্থার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের নিচে আছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে আগাম নির্বাচন ইরান আক্রমণের চেয়ে নেতানিয়াহুর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির গতিপথ অপ্রত্যাশিত।
অধিকন্তু হারম্যান বলেন, “নেতানিয়াহুর সামরিক কৌশল আপাতদৃষ্টিতে সফল হলেও তিনি বড় রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার মুখে আছেন। ছোট একটি দল তার ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta