সকাল-সন্ধ্যায় যেসব দোয়া পাঠ করবেন
দুশ্চিন্তা, বিপদ বা অন্য কোনো সমস্যার সমাধান পেতে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে মুমিনরা দুই হাত তুলে প্রার্থনা করেন। মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তিনি সর্বশক্তিমান ও অসীম দয়ালু। যখন কোনো বান্দা প্রার্থনা করে, আল্লাহ কখনো তাকে প্রত্যাখ্যান করেন না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যখনই কোনো বান্দা আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং ঈমান আনয়ন করে। তাদের জন্য সফলতা নিশ্চিত।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।
রাসুল (সা.) সকালে ও সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে কল্যাণের দোয়া করতে বলেছেন। উছমান ইবনু আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে বান্দা তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে, তার কোনো ক্ষতি হবে না। দোয়াটি হলো-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি সাইইন, ফিল-আরদি ওলা ফিস-সামায়ি, ওহুয়াস-সামিয়ুন আলিম।
অর্থ: আল্লাহর নাম নিচ্ছি। যাঁর নামে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩৮৬৯; তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৮)
ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্ধ্যায় যদি কেউ নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে, আল্লাহ তার সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবেন। দোয়াটি হলো:
رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওবিল-ইসলামি দ্বিনা, ওয়া-বি-মুহাম্মাদিন নাবিইয়ান।
অর্থ: আমি আল্লাহকে আমার রব হিসেবে, ইসলামকে আমার দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমার নবী হিসেবে গ্রহণ করি। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯)
এছাড়াও, সকাল-সন্ধ্যায় কবরের আযাব এবং বার্ধক্যের দৈন্যতা থেকে রক্ষা চেয়ে দোয়া করারও কথা এসেছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْكَسَلِ وَأَرْذَلِ الْعُمُرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ وَفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল কাসালি, ওয়া-আরদালিল-উমুরি, ওয়া-আযাবিল-কাবরি, ওয়া-ফিতনাতিল-মাখইয়াল মাম্মাতি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃপণতা, অলসতা, বয়সের নিকৃষ্টতম সময় (বার্ধক্যের দৈন্য), কবরের আযাব এবং জীবন ও মৃত্যুর দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চাই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৬২৯)
এছাড়াও, সর্বাবস্থায় সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার পাঠের উপদেশ এসেছে বিভিন্ন হাদিসে। শাদ্দাদ ইবনু আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো, বান্দা এই দোয়া পড়বে- ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার গোলাম। আমি যতটা সম্ভব তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারে আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের ভুল থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তুমি যে নিয়ামত আমাকে দিয়েছ, তা স্বীকার করছি। আর আমার গুনাহের কথা স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো, কারণ তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
আরবিতে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া-আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাসতাততু, আউযুবিকা মিন শার্রি মা ছানাতু, আবূউলাকা বিনিইমাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লি ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি সে মারা যায়, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে, সে যদি ভোর হওয়ার আগেই মারা যায় তবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৬৭)
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta