আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্থিতিশীলতা
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্থিরতা বাড়ছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলের মত অপরাধে যুক্ত হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রধানরা। নিজেদের অপরাধ সাম্রাজ্য রক্ষায় তারা যে কোন ভয়াবহ পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। সম্প্রতি গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে টেলি সুমনের হত্যাকাণ্ড এই অস্থিরতার নতুন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি গ্রুপ সাময়িকভাবে এগিয়ে থাকলেও শীঘ্রই প্রতিপক্ষ গ্রুপ প্রতিশোধ নিতে পারে। গত গণ অভ্যুত্থানের পর পুলিশ এখনও দুর্বল অবস্থানে থাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সংঘর্ষে বিদেশি মহলও যুক্ত হতে পারে, যা সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য সাঁড়াশি অভিযান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অপরাধীকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে বিচার করলে তাতে কোন লাভ হবে না। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র অনুযায়ী, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ৭টি নতুন গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতা এবং বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রের উদ্ধার না হওয়ায় এই অস্থিরতা বেড়েছে। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশে বসে দেশের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছেন, এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের সহায়তা চাচ্ছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের কার্যকলাপ বেড়ে যেতে পারে। গুলশানে টেলি সুমন হত্যাকাণ্ডের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডে আরও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যেখানে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী আক্তার হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুমন হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন।
দুবাইয়ে অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মেহেদী হাসান ওরফে কলিন্স ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রধান নিয়ন্ত্রক। যদিও তারা একে অপরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত, তাদের অধীনে রয়েছে একটি শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী। গুলশান, বাড্ডা ও অন্যান্য এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে যাতে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের ক্যাডারদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদে স্থাপন করতে কার্যকরীভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। মোহাম্মদপুর-বসিলা এলাকায় 'কবজিকাটা' গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক কিলার বাদল এবং আদাবর এলাকার এক নেতা অপরাধের একাধিক কাণ্ড ঘটাচ্ছেন।
২১ জানুয়ারি গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল এলাকায় এক মানি এক্সচেঞ্জারের ব্যবসায়ী কাদের শিকদারকে কুপিয়ে কোটি টাকা ছিনতাই করা হয়। র্যাব এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বের হয়ে আসেন প্রধান আসামি ইয়াসিন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো চেষ্টা চালাচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।
২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবী এলাকায় ব্লেড বাবু খুন হন। তার হত্যাকাণ্ডে মুসা সিকদার ওরফে সুমন সিকদারের নাম উঠে আসে। মুসা সিকদারও এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত হয়ে দেশের অপরাধ জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।
মিরপুর এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেনও সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চুপ থাকলেও এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এবং তার সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রয়েছেন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta