বাজেটে বাস্তবায়ন অযোগ্য কোনো প্রস্তাব থাকবে না
বাজেটে কোন প্রকল্প নেয়া হবে না যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বক্তৃতাটি হবে সংক্ষিপ্ত এবং মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রকল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে এবং বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এমন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে যা স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
আলোচনার শুরুতে উপদেষ্টা প্রাথমিক বক্তব্য দেন। এর পরে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা অন্যান্য আলোচনায় অংশ নেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাস্তবসম্মত প্রস্তাব আশা করছি। আমি এমন কোনো বড় আশ্বাস দেব না যা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। বাজেটে কিছু মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে থাকবে।
আমরা মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, ম্যাক্রো ইকোনমিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের চিন্তা করে বাজেট তৈরি করছি। আগের ২৫০-৩০০ পৃষ্ঠার পরিবর্তে এবার আমরা ৫০-৬০ পৃষ্ঠার মধ্যে বাজেটের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরব। সরাসরি পয়েন্টে যাবো, আগে যেমন ভূমিকা থাকতো তা থাকবে না।’
কর দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘আমি এই সেবা পাইনি, ওই সেবা পাইনি এমন ভাবনা না রেখে দেশের সেবার কথা চিন্তা করে কর দিন। আপনার বাসায় যদি লাইট না জ্বলে, তবে অন্যের বাসায় আলো জ্বলবে। কর দিন দেশের উন্নতির জন্য। এবারও কিছু শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করা হবে এবং ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া চালু করা হবে যাতে মুখ দেখাদেখি না হয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাইরের ঋণ নেয়া একেবারে না করার পক্ষপাতি আমরা, ঋণ নিয়ে কেবল সুবিধা পাওয়া ভালো নয়। তবে বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত এবং ঋণের পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। গ্রিসে ১৬০%, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি, তাদের সক্ষমতা ভালো। আমরা ঋণ ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করছি, এবং দেখছি কিভাবে ঋণ শোধ করা যাবে। আমরা কখনও ডিফল্ট করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ বাজেট সাপোর্ট হিসেবে আসে। প্রকল্প ঋণের মধ্যে অনেক ঋণ আসে, তবে বাজেট সাপোর্ট কমে গেলে আমরা প্রকল্প ঋণ দিয়ে সেটা করতে পারব না। আমরা মূলত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে বাজেট সাপোর্ট গ্রহণ করি, এবং এজন্য আমরা তাদের পরামর্শ অনুসরণ করছি। তবে বিদেশি ঋণ না নিয়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
ডলারের মূল্য মুক্ত বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা জুলাইয়ের মধ্যে সম্ভব হবে কি না তা বলা যাচ্ছে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যদি হুট করে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খারাপ ব্যাংক কীভাবে অবসায়ন হবে তা আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হবে। তবে, এক বিষয় নিশ্চিত যে, আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন। সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে এবং কৃষকদের জন্য ভর্তুকি প্রদান করাও চলমান থাকবে।’
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ভ্যাট কমানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে একক হারে ভ্যাট চালু করা হলে পরবর্তীতে কিছু খাতে যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার বাজেট ব্যবস্থাবান্ধব করার চেষ্টা করা হবে।’
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আগামী বাজেটে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি বন্ধ করার সুযোগ নেই, তবে আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয়ের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে এবং সবার মতামত নিয়ে বাজেট তৈরি করা হবে।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta