শেখ সেলিমের হাজার কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। মন্ত্রিত্ব না থাকা সত্ত্বেও শেখ পরিবারের প্রভাব ব্যবহার করে তিনি গত ১৫ বছর ধরে উন্নয়ন কাজের কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার কাজের জন্য পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০-১৫ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে।
গতকাল রোববার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন (প্রতিরোধ) এই তথ্য জানান। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি টানা চারটি সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন। শেখ মুজিবের ভাগ্নে হওয়ায় মন্ত্রিত্ব না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের বড় অংশ তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিশেষ করে ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ভাগবাটোয়ারা করতেন, এর বিনিময়ে ১০-১৫ শতাংশ কমিশন নিতেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কাজের নিয়ম অনুযায়ী দরপ্রস্তাবের তথ্য গোপন থাকে, কিন্তু শেখ সেলিম প্রতিটি প্রকল্পের দরপ্রস্তাবের তথ্য পেয়ে গিয়ে কাজ দেওয়ার সাথে সাথে কমিশন নেয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানী বনানীতে শেখ সেলিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার কাজের হিসাব উদ্ধার করা হয়।
বনানীর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, নাটোর, খুলনা ও রাজশাহীর বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের দরপত্রের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। নথিতে সংকেত দিয়ে ঠিকাদার, কাজের সময়সীমা ও কমিশনের হার উল্লেখ করা হয়েছে। ওই নথির অনুলিপিসহ একটি অভিযোগ দুদকে জমা হয়েছে।
সূত্র মতে, গোপালগঞ্জে ১১টি উন্নয়ন কাজকে ১১ প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নির্বাচন করা হত। এসব প্যাকেজে বাউন্ডারি ওয়াল, বিদ্যুত সাব স্টেশন, গ্যালারি শেড, স্টেডিয়াম সংস্কার, হোস্টেল কাম অফিস ভবন, উইমেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সসহ নানা নির্মাণ কাজের তথ্য রয়েছে।
এছাড়া মার্কেন্টাইল কর্পোরেশনের নামে ১১ কোটি ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার, বিএফএল-এএলসিএল জে/ভি নামে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার এবং অন্যান্য ঠিকাদারদের নামে আরও অনেক কাজের তথ্য নথিতে পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জের বাইরে চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও নাটোরেও ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta