শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়ার ‘শেষ ঠিকানার ঘর’ গড়লেন পাঁচ জন
কিশোরগঞ্জের ইটনা থেকে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ হিসেবে পরিচিত মনু মিয়া তার জীবনের শেষ যাত্রায় প্রবেশ করলেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে যাওয়া এই মানুষটির নিজের কবর তৈরি করলেন এলাকার পাঁচজন ব্যক্তি, যাদের মধ্যে কেউ কেউ একসময় তার সঙ্গেও কবর খুঁড়েছিলেন।
শনিবার (২৮ জুন) বিকালে জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কবর খননের কাজের নেতৃত্ব দেন করণশী গ্রামের কৃষক হবু রহমান (৬০), যাঁর সঙ্গে ছিলেন টুক্কু মিয়া (৫৫), ইয়াছিন মিয়া (৫০), বাতেন মিয়া (৫০) ও মারুফ খান সুজাত (২৯)।
এই পাঁচজনের হাতে গড়া হলো ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’-এর নিজস্ব শেষ ঘর।
মনু মিয়া শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস এবং বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ছয় দিন আগে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন।
৫০ বছরের নিঃস্বার্থ পরিশ্রম
১৯৫২ সালের ১৫ মার্চ আলগাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনু মিয়া। মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে কবর খোঁড়ার কাজে হাত দেন। এরপর থেকে শুধু আলগাপাড়া নয়, আশেপাশের গ্রাম ও জেলা জুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ হিসেবে।
কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করার সময় একটি ঘোড়া কিনেছিলেন, যাতে দ্রুত মৃত ব্যক্তির বাড়িতে পৌঁছাতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত, কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার সেই ঘোড়াটি মেরে ফেলা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেছিল।
‘পারিশ্রমিক নয়, ভালোবাসা’
কেউ কখনো তার কাছ থেকে পারিশ্রমিক, ভাড়া বা খাবারের খরচ নেয়নি। নিজেই নিজের খাবার ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতেন।
জানাজার সময় অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা বলেন, “মনু মিয়ার কবর খুঁড়ে দাফন করা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এটি শুধু শ্রদ্ধা নয়, ভালোবাসার পরিচয়।”
মনু মিয়ার মৃত্যুতে পুরো এলাকা শোকাহত। অনেকেই বলেন, এমন নিঃস্বার্থ ও পরোপকারী মানুষ শতাব্দীতে একজনই জন্মায়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta