চরফ্যাশনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের তীব্রতা: বরফকল বন্ধ, মৎস্য খাতে বিশাল ক্ষতি
ভোলার চরফ্যাশনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং নদ-নদীতে ইলিশের সঙ্কটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ৩২টি বরফকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য খাত একটি বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফকলগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, এর মধ্যে ২০টি বরফকল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ১৫টি বরফকল কষ্টে চলছে। ফলস্বরূপ, বরফকল মালিকরা বিপুল লোকসানে পড়েছেন। বরফ উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
বরফের সংকটের কারণে উপকূলীয় মাছঘাটে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বরফকল, আড়ত ও ট্রলার মালিকদের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই কারণে অনেক অটো রাইস মিল এবং ছোট-বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক পাখা, ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কাজ করছে না। পৌরসভাসহ উপজেলার লাখো গ্রাহক বিদ্যুতের অতি সমস্যা ভোগ করছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির ঈদের আগ থেকেই ভোলার ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের একটি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বোরহানউদ্দিন উপজেলায়ও একটি ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় ভোলায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সচল ১৪ মেগাওয়াট ট্রান্সফরমার দিয়ে ৩৩ কেভি ফিডার লাইনের মাধ্যমে ৬ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। বিকল ট্রান্সফরমার মেরামত হলে বিদ্যুৎ সংকট সমাধান হতে পারে।
বরফকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল মিয়া জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংকট এবং নদ-নদীতে ইলিশের অভাবের কারণে বরফ উৎপাদন ও বিক্রি কমে গেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই-তিন মাস ধরে বরফকল মালিকরা লোকসানের মুখে রয়েছেন।
নতুন স্লুইজঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী রফিক মিয়া ও হাবিব উল্লাহ জানিয়েছেন, ইলিশ সংকটের কারণে মাছ দ্বিগুণ দামে কিনে জেলার বাইরে পাঠাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বরফকল বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে বরফ পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রলারে মাছ পচে যাওয়ায় তাদের প্রতি ট্রিপে ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
সামরাজ আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় মাছ সংরক্ষণের সমস্যা হচ্ছে এবং আড়তে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হচ্ছে। গত কয়েক দিনে তাদের দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, ৫৮ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরফ উৎপাদন বন্ধ ছিল। বর্তমানে বরফকল সচল হলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে ২০টি বরফকল বন্ধ হয়ে গেছে।
ট্রলার মালিক ছালাউদ্দিন জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন বন্ধ থাকায় ট্রলারে মাছ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বরফ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জেলেরা সাগরে যেতে পারছেন না এবং ট্রলার মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
অটো রাইস মিল মালিক কামাল গোলদার জানিয়েছেন, লাগামহীন লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক রাইস মিল বন্ধ হয়ে গেছে এবং শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র জানিয়েছে, চরফ্যাশন সাব-স্টেশনের ধারণক্ষমতা সীমিত, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের এ সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। শীত মৌসুমের আগেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন বলে তারা মনে করছেন।
ওজোপাডিকোর চরফ্যাশন আবাসিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ভোলার বোরহানউদ্দিনের ৩৩ কেভি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি বিকল। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে না। দিনে-রাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দুটি রেন্টাল প্ল্যান্টের একটি ট্রান্সফরমার বিকল। দ্রুত সেটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta