হাওরের জীবন ও প্রকৃতি: কিশোরগঞ্জে জল ও জোছনার মিলন
কিশোরগঞ্জ: আষাঢ়ের উজ্জ্বল দুপুরে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার হাওরের দৃশ্য দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। মেঘের সঙ্গে রোদের মিশ্রণ আর চারপাশের বিস্তৃত জলরাশি যেন আকাশের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। শান্ত জলে সূর্যের আলো যেমন প্রবাহিত হয়, তেমনি পর্যটকদের হৃদয়ে আলাদা একটা জায়গা করে নেয়।
বর্ষায় হাওর এক বিশাল জলরাশি হয়ে ওঠে, আর শুকনো মৌসুমে এখানে হাঁটার পথ তৈরি হয় - কিন্তু এখন সেখানে তৈরি হয়েছে উন্নত রাস্তা। এখন এই হাওর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত এবং জীবনের সঙ্গে জলের মিলন ঘটে।
হাওরের বুকে অবস্থিত গ্রামগুলো দূর থেকে দ্বীপের মতো মনে হয়। এসব গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রা একেবারে আলাদা, তাদের বসতঘরগুলো বাঁশের ফলি দিয়ে ঘেরা, যা তাদের কষ্টের প্রতিচ্ছবি। অষ্টগ্রামের সবুর মিয়া বলেন, তাদের জীবন পানি নির্ভর। শান্ত পানি জীবনকে সহজ করে তোলে, আর অশান্ত পানি সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।
জহুর শেখের বাসস্থান নদীর ধারে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি হাওরে বাস করছেন। তার তিন ছেলে বাবার সঙ্গে মাছ ধরে, আর মেয়ে মায়ের সঙ্গে খড়কুটো সংগ্রহ করে। বাড়ির পাশে সবজি বাগান তাদের জীবিকা জোগায়।
হাওরকে দেশীয় মাছের প্রাচীন আধার বলা হয়। এখানকার খাবারে প্রায় সবসময়ই মাছের নানা পদ থাকে, সঙ্গে হাঁসের মাংসও পাওয়া যায়। নৌকায় বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে খাবারের স্বাদ আরও বাড়ে।
প্রতিটি ঋতুতে হাওর এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। ভোরে হাওর থাকে শান্ত, আর একটু পরেই পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে ওঠে। দুপুর ও বিকেলে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা চোখে পড়ে। সন্ধ্যায় হাওর এক সোনালী আলোয় ভরে যায়, আর রাতে আকাশে তারাদের ঝলক দেখা যায়। সন্ধ্যায় প্রায়ই বাউল গানের অনুষ্ঠান হয়।
মিঠামইনের রুস্তুম আলী বলেন, তিনি নৌকায় চলেন। ধান চাষ করে তার পরিবার চলে। সাপ ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই তারা বেঁচে আছেন।
অষ্টগ্রামের সফিকুল ইসলাম বলেন, হাওরে বিদ্যুৎ আসবে এটা তাদের কল্পনার বাইরে ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা। এখনকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করছে।
ঢাকা থেকে আসা আকাশ মাহমুদ বলেন, হাওরের মাঝখানে ছিমছাম বাড়ি, সবজি ক্ষেত এবং শিশুদের খেলার মাঠ দেখে মনে হয় যেন এক আলাদা দুনিয়া। শুকনো মৌসুমে যেখানে বিশাল সবুজ তৃণভূমি ছিল, বর্ষায় তা অকূল দরিয়া হয়ে ওঠে - এটা ভাবতে গা শিহরিত হয়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta