নারী নিপীড়ন: এনসিপির দলীয় চেতনা ও নৈতিকতা নিয়ে নীলা ইসরাফিলের প্রশ্ন
এনসিপি সদস্য নীলা ইসরাফিল অভিযোগ করেছেন, তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে তার অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি এনসিপি নেতা তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।
নীলা লিখেছেন, "আমি, নীলা ইসরাফিল, জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন আদর্শনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি। রাজনীতি আমার কাছে কোনো লোভের বিষয় নয়, এটি একটি নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে করা কাজ।"
তিনি বলেন, "আমি এই অভিযোগ দিচ্ছি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে, শুধুমাত্র নিজের সম্মান রক্ষা নয়, বরং সংগঠনের নারী সদস্যদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার আশায়।"
নীলা বলেন, "২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমি এক নির্মম সহিংসতার শিকার হই, আমার প্রাক্তন স্বামী মোয়াজ আরিফ ঢাকা ক্লাবে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে, এবং আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনা শারীরিক ও মানসিকভাবে আমাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সুরক্ষার জন্য আমাকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে নেপালে চলে যেতে হয়।"
নীলা জানান, এই সময়েই তিনি তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি একজন রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। তবে তুষার কিছু সময় পর সম্পর্কটি ব্যক্তিগত ও অনৈতিক রূপ নেয়।
নীলা তার অভিযোগে ৪টি ধাপে তুষারের অনৈতিক আচরণ উল্লেখ করেছেন:
১. রাতের বেলা অশালীন ফোনালাপ:
তিনি প্রায়ই রাতে ফোন করে অশালীন মন্তব্য করতেন, যেমন, "তোমার ঠোঁট সুন্দর," "একটি ছবি পাঠাও," যা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
২. ভিডিও কল এবং ব্যক্তিগত ছবি চাওয়া:
বারবার অনুরোধ করার পরেও তুষার ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আলাপ করতে চাইতেন এবং ছবি চাইতেন।
৩. মিথ্যা দাবি করা:
তিনি ডিবি অফিসারের কাছে বলেছিলেন, "তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড," যা আমার সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
৪. ফোনালাপ রেকর্ড করা ও প্রচার:
নানা চাপে আমি তুষারের সঙ্গে কিছু ফোনালাপ রেকর্ড করি, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
নীলা বলেন, "দলীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় আমি হতাশ। ৭ জুন ২০২৫ ঈদের রাতে আমি বিষয়টি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানাই। পরে ১৫ জুন মহাসচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।"
নীলা অভিযোগ করেন, "১৬ জুন রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার পরেও আমি এনসিপির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সংগঠনিক পদক্ষেপের জন্য কথা বলি, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দলীয় সহানুভূতি বা সুরক্ষা প্রদান করা হয়নি।"
নীলা আরো বলেন, "তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো পর থেকে সামাজিক মিডিয়াতে আমাকে নিয়ে নিন্দা, অপপ্রচার ও চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে, যা কোনো আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং ডিজিটাল লিঞ্চিং।"
তিনি বলেন, "এনসিপির দলীয় চেতনা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই। কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, আমার সম্মান ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আপনি কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন?"
নীলা তার অভিযোগপত্রে তিনটি দাবি জানিয়েছেন:
১. একটি নিরপেক্ষ ও নারীবান্ধব তদন্ত কমিটি গঠন করে তুষারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
২. নারী কর্মীদের জন্য কার্যকর অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু করা হোক।
৩. এনসিপি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিক, যা দলকে আরো শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।
নীলা বলেন, "আমি দীর্ঘ চিন্তা ও মানসিক বিপর্যয়ের পর এই অভিযোগ করেছি। আমি ন্যায্যতার জন্য দলীয়ভাবে ব্যবস্থা আশা করি এবং বিশ্বাস করি, এনসিপি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে নারী কর্মী কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং সম্মানিত অংশীদার।"
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta