ইরান কখনও কারও কাছে মাথা নত করবে না।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত সম্প্রতি অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়েছে। এক বছরের মধ্যে এই আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৩,২৪৬ শতাংশ বা ৫৭ কোটি ১৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশিদের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯ টাকা হিসাব করলে, এর পরিমাণ ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬৪ কোটি টাকা ছিল। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমার উৎস সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা বাড়ানোর কারণে ধনীরা আবারও সেখানে অর্থ জমা রাখতে আগ্রহী হয়েছেন। সুইজারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের ধনীদের জন্য একটি নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। কঠোর গোপনীয়তার কারণে এখানকার ব্যাংকগুলো বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় রয়েছে। তাই কর ফাঁকি বা অবৈধ উপার্জনের অর্থ এখানে জমা হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
গ্রাহকরা সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিলেও, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এক বছরের মধ্যে জমার পরিমাণ প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁ, যা আগের বছরে ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ। এর মানে হলো, ২০২৪ সালে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ প্রায় ৩,২৪৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০২৩ সালে প্রায় ৬৮ শতাংশ কমেছিল। ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জমা ছিল সবচেয়ে বেশি। পরবর্তীতে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে কিছুটা কমলেও, ২০২৪ সালে আকস্মিকভাবে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি কেন হয়েছে, তা প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বলা হয়নি।
২০২২ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২১ সালে ৮৭ কোটি ১১ লাখ, ২০২০ সালে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ এবং ২০১৯ সালে ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার তথ্য প্রকাশ করে আসছে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিকতার গোপন রেখে অর্থ জমা রেখেছে, তবে তা এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এছাড়া, সোনা বা মূল্যবান সামগ্রীগুলির আর্থিক মূল্যও এখানে হিসাব করা হয়নি।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল সুইস ব্যাংকে, যা ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। ২০০২ সালে বাংলাদেশিদের জমা ছিল মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। এর পরবর্তী দুই দশকে জমার পরিমাণ প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে। অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা ছিল, এবং ২০২৪ সালে সে ধারাটি অব্যাহত ছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের মানে এই নয় যে, তা সবই পাচারের অর্থ। কারণ সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা বৈধভাবেও অর্থ জমা রাখেন, এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জমাও করা হয়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta