যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক খাতে ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, ইউক্রেন সংঘাত, ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের অচল আলোচনা ও এশিয়ায় বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতার মাঝে, ২০২৫ সালে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাজেট হিসেবে ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) এই তথ্য প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, পরবর্তী দশ বছরজুড়ে পারমাণবিক সামরিক সক্ষমতা সংরক্ষণ ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
সিবিও’র বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের বাজেট পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই এই বিশাল বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৯৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে ৩৫৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বিদ্যমান পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রক্ষণাবেক্ষণে।
প্রধান ব্যয়ের খাতগুলো:
অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় ৩০৯ বিলিয়ন ডলার;
নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কীকরণ প্রযুক্তিতে ৭৯ বিলিয়ন ডলার;
গবেষণা ও পরীক্ষাগারে ৭২ বিলিয়ন ডলার;
প্রয়োজনে অতিরিক্ত খরচের জন্য ১২৯ বিলিয়ন ডলার সংরক্ষিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তির মধ্যে রয়েছে:
পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী সাবমেরিন,
ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য আইসিবিএম,
দীর্ঘ ও স্বল্পপাল্লার বোমারু বিমান ও পারমাণবিক ওয়ারহেড।
স্ট্যাটিস্টা’র ২০২৪ সালের জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১২,১২১টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে রয়েছে ৫,০৪৪টি।
উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান:
মোট বরাদ্দ: ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার (২০২৫–২০৩৪)
বার্ষিক গড় ব্যয়: ৯৫ বিলিয়ন ডলার
অস্ত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা: ৩০৯ বিলিয়ন ডলার
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: ৭৯ বিলিয়ন ডলার
গবেষণা ও পরীক্ষা: ৭২ বিলিয়ন ডলার
অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য: ১২৯ বিলিয়ন ডলার
বিনিয়োগের পেছনের কারণ:
চীন ও রাশিয়ার অগ্রগতি: রাশিয়া হাইপারসনিক অস্ত্রে এগিয়ে রয়েছে, চীনও দ্রুত তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াচ্ছে।
‘নিউক্লিয়ার ত্রয়ী’র আধুনিকায়ন: যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি (আইসিবিএম), আকাশ (বি-২১ বোমার) ও জলপথ (কলাম্বিয়া-ক্লাস সাবমেরিন) ভিত্তিক পারমাণবিক ক্ষমতা এখন উন্নত প্রযুক্তি দাবি করছে।
পুরনো অস্ত্রের সীমাবদ্ধতা: শীতল যুদ্ধকালীন অধিকাংশ অস্ত্রই প্রযুক্তিগতভাবে অপ্রতুল ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়বহুল।
বিশ্বে পারমাণবিক অবস্থান:
মোট ওয়ারহেড (২০২৪): ১২,১২১
যুক্তরাষ্ট্র: ৫,০৪৪
রাশিয়া: আনুমানিক ৫,৮০০
চীন: ৫০০+ এবং দ্রুত বাড়ছে
বিতর্ক: আত্মরক্ষা, নাকি প্রতিপত্তি?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিপুল বাজেট শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের কৌশল।
এই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো—এটাই শান্তিকামীদের প্রশ্ন।
পারমাণবিক কূটনীতির বার্তা:
এই বরাদ্দ শুধু একটি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নয়, বরং বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানান দেওয়ার এক কৌশলী বার্তা।
আজকের বাস্তবতায় পারমাণবিক অস্ত্রহীনতা শক্তির ঘাটতি নয়; তবে অস্ত্র থাকলেই নিরাপদ—এই ধারণা যেন নতুন করে জোরালো হচ্ছে। -সূত্র: আনাদোলু
আরএস
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta