বাংলাদেশিদের উপর আমেরিকার বর্তমান কঠোর অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছে, যেখানে অননুমোদিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন এবং সব ধরনের ভিসা আবেদনকারীদের আরও কঠোরভাবে যাচাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো “সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং বিদ্যমান অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।” এই কড়া নীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
‘বাংলাদেশি অভিবাসীদের উপর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনটি আজ ১৩ই এপ্রিল ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলার জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজন করে ইমিগ্র্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল, ইউএসএ। মূল বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।
বাংলাদেশিদের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বক্তব্যে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে, যেমন:
১. অননুমোদিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন: ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বাংলাদেশি অননুমোদিতদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে পারে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটে এই ধরনের অভিবাসীর সংখ্যা বেশি থাকায়, মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক আলোচনাও চলছে।
২. কঠোর ভিসা যাচাই: গ্রিন কার্ড এবং অন্যান্য ভিসা বহনকারীদের জন্য বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরে ১০ মাসের বেশি সময় বিদেশে থাকলে স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা হারানোর ঝুঁকি থাকে। “যদি কেউ বছরে ১০ মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকেন, তাহলে গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে,” বলেন মঈন চৌধুরী।
৩. ছাত্র ভিসার বিলম্ব: ঢাকায় ইউএস দূতাবাসে F-1 ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্টের চাপ বেড়েছে, ফলে অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হচ্ছে। প্রশাসনিক যাচাইয়ের কারণে এই বিলম্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, তাই সময়মতো আবেদন ও সঠিক পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৪. পারিবারিক ও কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা: কঠোর যাচাই ও সীমিত সাক্ষাৎকারের কারণে পারিবারিক পুনর্মিলন এবং H-1B/H-2B কর্মভিত্তিক ভিসার ক্ষেত্রে দীর্ঘ অপেক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে। আবেদনকারীদের পূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা এবং ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন বক্তারা।
যেমন, নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখুন:
“আমি সব বাংলাদেশিদের বলছি—আপনার ডকুমেন্টস হালনাগাদ রাখুন, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান থেকে বিরত থাকুন এবং নতুন নিয়ম বুঝতে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিন,” বলেন মঈন চৌধুরী।
কূটনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহণ: যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের দ্রুত ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিচয় যাচাই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিকল্প গন্তব্য বিবেচনা: যদি মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হয়, তাহলে কানাডা, যুক্তরাজ্য কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
কমিউনিটির সহায়তা জোরদার: ইমিগ্র্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল, ইউএসএ ঢাকায় ও নিউ ইয়র্কে আরও আইনি সহায়তা কেন্দ্র এবং তথ্যভিত্তিক ওয়েবিনার চালু করবে যাতে অভিবাসীরা হালনাগাদ তথ্য পেতে পারেন।
শেষে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসন নীতি বাংলাদেশিদের জন্য নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আইনি প্রস্তুতি, কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং কমিউনিটির সহযোগিতা ভবিষ্যতে তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta