বড়দিনের অর্ডার মেটানো কঠিন হবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলেও দেশের পোশাকশিল্পে উদ্বেগ কাটেনি। এই সময়টাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে বাংলাদেশকে। তা না হলে বড়দিনের অর্ডার পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।
একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় দেশের বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রবিবার রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনায় এ কথা বলেন নাসিম মঞ্জুর। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিষয়ে দুশ্চিন্তা ও পরামর্শ জানাতে এই সভার আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ আত্মতুষ্টির কারণ হওয়া উচিত নয়।
আমাদের দ্রুত জানাতে হবে যে আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি। একটি দিনও অপচয় করা যাবে না।’
মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ রপ্তানি পণ্য মৌসুমি নির্ভর। এই সময়সীমা শেষ হবে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্ডার নেয়ার সময়।
যদি আগেই পণ্যের দাম নির্ধারিত না হয়, তাহলে পুরো মৌসুমের অর্ডার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এতে অনেক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আমদানি শুল্ক কাঠামো পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের শুল্ক শূন্য হলেও সম্পূরক শুল্ক অনেক বেশি। কোনো সরকার শুধুমাত্র এসডি’র ওপর নির্ভর করতে পারে না।
এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দ্রুত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।’
নাসিম মঞ্জুর বলেন, অশুল্ক বাধা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন, এখনো আমাদের দেশে খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রেডিয়েশন পরীক্ষা রয়েছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা সময় ও অর্থের অপচয় ঘটায় এবং এর প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর।
সভায় মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বলেন, শুল্ক নিয়ে সাধারণ অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা হলে এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে পারে।
জন ফে আরও বলেন, ‘এখন জরুরি হলো, এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয়া। ৯০ দিন খুব অল্প সময়। শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, এই সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।’
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিকারক দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, পণ্য আনতে হলে ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ল্যাবের সংখ্যা কম হওয়ায় রিপোর্ট পেতে ৩-৪ দিন, ছুটির সময়ে ৮-১০ দিনও লাগে। এতে সময় ও খরচ বাড়ে।
শরিফ জহির বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলো এমনভাবে চলছে যে, কয়েক মাস রপ্তানি বন্ধ থাকলে আমরা টিকতে পারব না। তাই ৯০ দিনের প্রতিটি দিন আমাদের কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি বেসরকারি খাতকে সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখার অনুরোধ জানান।
ইপিবি পরিচালক আবু মোখলেস আলমগীর হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে তিনি মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তুলা মানসম্মত হওয়ায় আমরা তা ব্যবহার করতে চাই। তবে প্রতিযোগীদের তুলনায় এর দাম ও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় আমরা পিছিয়ে পড়ি।’
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের সদস্য বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যাচাই করছি, আর কী পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা যায়।’
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আমাদের দেশে শুল্কের চেয়েও অশুল্ক বাধা বেশি। এসব বিষয়ে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সমস্যা সমাধানই মূল বিষয়।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta