অনিশ্চয়তায় ১০ হাজার কোটি টাকার শিপমেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি শুল্ক ৩৭ শতাংশ বাড়ানোর ফলে সেখানে পাঠানো পণ্যগুলোর শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। গার্মেন্টস মালিকদের মতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক শিপমেন্ট করা হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৮০ কোটি টাকার সমমূল্য। কিছু পণ্য এখনো বন্দরে, আর কিছু পণ্য জাহাজে রয়েছে। শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর এই পণ্যের ভাগ্য সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার আগে যেসব পণ্যের অর্ডার পাওয়া গেছে এবং যেসব পণ্য কারখানায় তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর শুল্ক পরবর্তী স্থিতি নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হঠাৎ করে ট্যারিফ বৃদ্ধি ঘোষণার পর গার্মেন্টস খাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং এতে কারখানা মালিকরা উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে পোশাক খাতের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্রেতাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করছেন। বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো- শিপমেন্ট পণ্য। প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। তবে আগের মাসের সমপরিমাণ পণ্য এখন বন্দরে শিপমেন্টের অপেক্ষায় বা জাহাজে রয়েছে।
কারখানা মালিকরা জানাচ্ছেন, ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এই সময়ের মধ্যে শিপমেন্ট হওয়া বা কারখানায় উৎপাদিত পণ্যগুলোর কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, শিপমেন্ট যদি স্থগিত হয়ে যায়, তাহলে ব্যাংকের ব্যাক টু ব্যাক দায় পরিশোধ করতে সমস্যা হবে, আর নতুন এলসি খোলা যাবে না। ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে।
৫০ লাখ শ্রমিকের আয় নিয়ে উদ্বেগ: ২০২২ সালের জুনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, পোশাক শিল্পে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক আছেন, যাদের ৫২.২৮ শতাংশ নারী। অন্যদিকে, বিকেএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, নিট পোশাক শিল্পে ১৭ লাখ ২৫৫ জন শ্রমিক রয়েছেন, যাদের ৬২ শতাংশ নারী। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যদি শিপমেন্ট স্থগিত হয়, তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে এই শ্রমিকদের। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যদি ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এর প্রথম প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের আয় ও কর্মসংস্থানে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে আয় কমলে এর প্রভাব পড়বে শ্রমিক খাতে। বাংলাদেশের কারখানা মালিকরা অধিক মুনাফা করতে চান, এবং আয় কমলে শ্রমিকদের বাজেট কমিয়ে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করবেন। ফলে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যদি তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের শ্রমিকরা।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta