এখনো ঈদ বোনাস পাননি ২৯৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা
ঈদুল ফিতরের আগেই দেশের পোশাক শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিকের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা স্বস্তি পেয়েছেন এবং উদ্যোক্তারাও চাপমুক্ত হয়েছেন। তবে ২৯৯টি কারখানায় এখনো ঈদ বোনাস পরিশোধ হয়নি, যদিও ২ হাজার ৫৯১টি কারখানায় বোনাস প্রদান করা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি কারখানার মধ্যে ৮ হাজার ৩৯টি ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। তবে ৪ হাজার ৩৫২টি কারখানা মার্চ মাসের বেতন এখনও দেয়নি, যা মোট কারখানার ৪৫ শতাংশ।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান জানিয়েছেন, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৯৯.৫৩ শতাংশ কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। মার্চ মাসের ১৫ বা ৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩.২০ শতাংশ এবং ঈদ বোনাস দিয়েছে ৯৪.৭৮ শতাংশ কারখানা। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন ০.৪৭ শতাংশ কারখানায় এখনও প্রক্রিয়াধীন।
বিজিএমইএ নির্দেশ দিয়েছে, ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হবে যাতে মহাসড়কে যানজট কমে।
বেতন বা বোনাস না পেলে ঈদে পোশাক শ্রমিকরা মিছিল করবে : আজ শনিবারেও বেতন ও বোনাস না পেলে পোশাক শ্রমিকরা ঈদের দিনে ভুখা মিছিল করবে। তবে, আজ শনিবার যদি বেতন-বোনাস না দেওয়া হয়, তাহলে অসন্তোষ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে কারণ ব্যাংক বন্ধ হলে ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের সুযোগ থাকবে না।
গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা ঈদের আগে বেতন ও বোনাসের দাবিতে কয়েকদিন ধরে ঢাকায় শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। মালিকপক্ষ তাদের এক কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়ার কথা বললেও তাদের পাওনা সাত কোটি টাকার বেশি। তারা যদি তাদের পাওনা না পান, তবে অবস্থান চালিয়ে যাবেন এবং ঈদের দিনে মিছিল করবেন।
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পরিদর্শক কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা দেওয়া কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৭, যা মোট কারখানার ৯৪.৭৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯.৫৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৯৭টি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেছেন, সরকার দাবি করছে যে প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে, তাতে ১০ শতাংশেরও বেশি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি। শনিবার বিকেল নাগাদ বাস্তব চিত্র জানা যাবে।
তিনি মনে করেন, শ্রম মন্ত্রণালয় যদি যথাযথ উদ্যোগ নিত, তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
তিনি আরও বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে না এবং মালিকপক্ষের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। বেতন-বোনাসের হিসাব শুধুমাত্র চালু কারখানাগুলোর হিসাব করে করা হচ্ছে, যদিও বাস্তবে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে। কিছু দিন আগেই তিনটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গার্মেন্টস মুক্তি আন্দোলনের ইকবাল কবির জানিয়েছেন, টিএনজেড গ্রুপের তিনটি কারখানা শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছে। গাজীপুর, আশুলিয়া এবং সাভারে আরও বেশ কিছু পোশাক কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ হয়নি।
বিজিএমইএর সদস্য নয় এমন কারখানাতেও সমস্যা রয়েছে, জানিয়েছেন ইকবাল কবির।
গাজীপুর জেলার মোট ২ হাজার ১৭৬টি শিল্প-কারখানার মধ্যে ৭৭৬টি পোশাক কারখানা রয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, মোট শিল্পের মধ্যে ১২১টি কারখানা এখনও বোনাস দেয়নি। তারা শনিবারের মধ্যে বোনাস দেওয়ার আশা করছে। মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে ৮০ শতাংশ কারখানা এবং এক হাজার ৪৮৯টি কারখানা শুক্রবার থেকে ছুটি পেয়েছে। বাকিগুলো শনিবার কাজ করিয়ে ছুটি দেবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta