দেশে সিগারেটের দাম কম, আরও বাড়ানোর দাবি
আগামী বাজেটে সিগারেটের মূল্য স্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা।
প্রতিষ্ঠান দুটি মনে করে, সিগারেটের চারটি মূল্য স্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকার কারণে তামাক কর ও মূল্য ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। তারা মনে করেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেট একত্রিত করলে দাম বাড়ানো সম্ভব হবে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগণ সিগারেটের ব্যবহার কমাবে।
সোমবার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্যসংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ডিরেক্টর এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মাহফুজ কবীর জানান, বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি সিগারেট ব্যবহারকারী নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। এই দুই স্তর একত্রিত হলে রাজস্ব বাড়বে এবং সিগারেটের ব্যবহারও কমবে। বর্ধিত রাজস্ব বর্তমান সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিগারেটসহ নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালের (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, একই সময় সিগারেটের দাম মাত্র ৬ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেট একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ, উচ্চ স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা হবে। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা, ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রামগুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। এছাড়া, সকল তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাক বিরোধী কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ধূমপান কমে যাবে এবং ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta