যুদ্ধবিরতি নয়, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধে রাজি রাশিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক এবং পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে, তিনি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর চলমান হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প এবং পুতিন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, সৌদি আরবে ট্রাম্পের প্রতিনিধি দল ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার এক মাসের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা করলেও পুতিন সেটিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হলে ইউক্রেনকে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
এদিকে, ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা আগেই এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়া সম্প্রতি তাদের কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে, যেগুলি ছয় মাস আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছিল।
ট্রাম্প এবং পুতিনের ফোনালাপ থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছে। তবে, দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শান্তি আলোচনা দ্রুত শুরু হবে।
জেদ্দায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যাতে স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে হামলা বন্ধের বিষয়টি ছিল।
ফোনালাপের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হেলসিঙ্কিতে সরকারি সফরে গিয়েছেন এবং তিনি জানিয়েছেন যে, জ্বালানি অবকাঠামো রক্ষা করবে এমন সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইউক্রেন সম্মত, তবে তারা আরও বিস্তারিত জানতে চায়।
এদিকে, পুতিন ইউক্রেনে একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশেষ করে সুমি শহরের একটি হাসপাতাল ও স্লোভিয়ানস্কের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন।
পুতিন পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, তিনি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং আরও কিছু হামলা হয়েছে, বিশেষত বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প ফোনালাপকে ‘খুব ভালো ও ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, অবকাঠামো ও জ্বালানিতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়া সম্মত হয়েছে, যা একসময় পূর্ণ যুদ্ধবিরতির দিকে এগোবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের ৮০ শতাংশ জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে রাশিয়ার বোমাবর্ষণে। ইউক্রেনও পাল্টা আক্রমণ হিসেবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশেষত তেলের শোধনাগার ও গ্যাস স্থাপনাগুলোয়।
জেদ্দায় গত সপ্তাহে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এখন বল রাশিয়ার কোর্টে। কারণ ইউক্রেন পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে, মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউস যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে পূর্বের চুক্তির কোনও উল্লেখ নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তির পথে অগ্রগতি শুরু হবে। এরপর কৃষ্ণসাগরে একটি সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি এবং পরে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে ক্রেমলিন তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে, কারণ ইউক্রেনের জন্য বিদেশি সমর্থন ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধের ‘মূল শর্ত’ এখনও রয়েছে। রবিবার জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু হবে। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta