বেক্সিমকো ফার্মার ২২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত শুরু
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে বেক্সিমকো ফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ২২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক আফরোজা হক খানের নেতৃত্বে একটি চার সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে।
এই বিষয়ে গতকাল সোমবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেছেন। চার সদস্যের দলটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার, উপসহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা এবং কাজী হাফিজুর রহমান। তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক নথি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, করোনার ভ্যাকসিন ক্রয় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আমলাদের একটি সিন্ডিকেট গঠন করে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে সালমান, জাহিদ মালেক ছাড়াও তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের নাম উঠে এসেছে।
সূত্রের মতে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ভ্যাকসিন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রয় করে। বেক্সিমকো ফার্মা এই ক্রয়ের সাথে যুক্ত ছিল। এই চুক্তিতে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং সরকারি ক্রয়বিধির অনুসরণ হয়নি। সেই সময় দর-কষাকষির নিয়মগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে এবং অসাধু প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন কিনলে সরকারের আরও বেশি পরিমাণ টিকা ক্রয় সম্ভব ছিল।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো ফার্মা ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিটি ডোজ থেকে ৭৭ টাকা লাভ করেছে। তারা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৭০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা। অন্যদিকে, চীন থেকে সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের ৩.১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানি করতে খরচ হয়েছে ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা। এর বিপরীতে, সিনোফার্মার প্রতি ডোজ কেনার অনুমোদন ছিল মাত্র ১০ ডলারে। এতে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে বলা হয়েছে, করোনার ভ্যাকসিনের ক্রয় প্রক্রিয়ায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল যার নেতৃত্বে ছিলেন সালমান এফ রহমান এবং জাহিদ মালেক। এই সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, ডিএমআরসি চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তাদের তৎপরতায় বঙ্গভ্যাক্স আটকে যায় এবং সরকারের প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। সালমান এফ রহমান তার প্রভাব ব্যবহার করে নিজের প্রতিষ্ঠানের লাভবান করেছেন এবং দেশের সম্পদের অপচয় ঘটেছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta