আবরারের মা সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকরের আবেদন জানালেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এই রায়ের পর আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকর ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার (১৬ মার্চ) আদালতের রায় ঘোষণা হওয়ার পর কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের নিজ বাসভবনে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ সময় আবরারের দাদা আব্দুল গফুর বিশ্বাস, মেজ চাচি নিলু ও সেজ চাচি মমতাজ বেগমও রায়ে সন্তুষ্টি জানান।
রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে হাইকোর্টের এই রায়ে আমি অত্যন্ত খুশি। শুধু আমি না, সারা দেশের মানুষ খুশি। ২০২২ সালের রায়েরও সম্মতি ছিল। প্রথম রায় ঘোষণার সময়ও দেশবাসী তা সমর্থন করেছিল। বর্তমান সরকার, বিচার বিভাগ, ছাত্রসমাজ, সাংবাদিক এবং দেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ছয় বছর পরও আমার সন্তানকে কেউ ভুলে যায়নি। সবাই আমার আবরারকে মনে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান র্যাগিং মুক্ত হোক। যেন কোনো ধরনের অত্যাচার না হয়। আমি চাই, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো মা-বাবা আমার মতো সন্তান হারায় না। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন যেন অটুট থাকে। যে রায় হয়েছে, সেটি দ্রুত কার্যকর হোক, যেন আর কোনো শিক্ষার্থী এমন নির্মমতার শিকার না হয়।’
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্ট রবিবার (১৬ মার্চ) ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য মোজাহিদুর রহমান, সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ ও এসএম মাহামুদ সেতু।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, সদস্য আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হোরায়রা।
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে আসামিরা দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ফেসবুকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং ফারাক্কার পানি নিয়ে পোস্ট দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta