ঈদযাত্রার জন্য আজ ২৬ মার্চের ট্রেন টিকিট বিক্রি হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণীর মানুষ এখন অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের জন্য। একই সঙ্গে, শর্টটার্ম, মিডটার্ম কিংবা লংটার্ম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, বিশেষত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য, যারা নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- শফিউল আলম দোলন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছে তাদের সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সুতরাং, জনগণ এখন অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে। আর সেই প্রক্রিয়া একটি নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করলে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমনটাই, সব বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন নির্বাচিত সরকারের জন্য। একটি নির্বাচিত সরকার এলেই তারা শর্ট, মিড, এবং লং-টার্ম পরিকল্পনা নিতে পারবেন। প্রশাসন এবং পুলিশ দিয়ে এসব সমাধান সম্ভব নয়; এজন্য রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি কেমন এবং ব্যবসায়ীরা কীভাবে আছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ব্যবসায়ীরা ভালো অবস্থানে নেই। কারণ তারা শর্টটার্মে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আর এর জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু শর্ট-টার্ম সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধান ছাড়া ব্যবসায়ীরা স্থিতিশীলতা পাবেন না। ব্যাংক খাতের অবস্থা খারাপ, দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল। অর্থনৈতিক পরিবেশ ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল নয়। ব্যবসায়ীরা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, কারণ তবেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে? আপনার মতে, নির্বাচনের টাইমফ্রেম কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন হওয়া উচিত। সব কিছুই অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে, নির্বাচনের জন্য একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছে, আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি কখনো মোনাফেকের দল নয়। যা কথা বলি, তা বাস্তবায়ন করি। আমরা ৩১ দফা ঘোষণা করেছি এবং নির্বাচনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করে সেই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : যাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন, তাদের কেউ পিছু হটেছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : কেউ পিছু হটেনি। তারা সবাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। যারা পিছু হটবে, তাদের রাজনৈতিক ক্ষতি হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যদি মাফ চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আপনি কী মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এটি তার ব্যক্তিগত মতামত। জনগণই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যা বলছেন, সেটা তাদের নিজস্ব দায়িত্ব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনার দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ আমরা বিশ্বাস করি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। নির্বাচনে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম সন্তোষজনক কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিচার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনে কিছুটা উন্নতি হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন দ্রুত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জাতীয় নির্বাচনে কোনো অনিশ্চয়তা আছে বলে মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জনগণ দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করছে। যদি কেউ আবারও জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জামায়াতে ইসলামী অনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে, আপনি কী মতামত পোষণ করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপাতত এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে যদি কেউ চায়, তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল কবে হবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : কাউন্সিল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরেই হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সময়মতো দেশে ফিরবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ‘মাইনাস টু’ পরিকল্পনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : যারা মাইনাস করার চেষ্টা করেছে, তারা রাজনৈতিকভাবে হারিয়েছে। জনগণের আস্থা না থাকলে রাজনীতি করা উচিত নয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত সবার জন্য সমান সুযোগের।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা এটা স্বাগত জানাই। তবে তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের প্রতি আস্থা রাখা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ‘এ দলকে অনেকে কিংস পার্টি মনে করছে’ - আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : জনগণই ঠিক করবে কোন দল কেমন কাজ করবে। আমি তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta