তারেক রহমান নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’
বৃটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ নিউজ ম্যাগাজিনের চলতি সংখ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি প্রকাশ করা হয়েছে। শিরোনাম ছিল ‘ডেসটিনি'স চাইল্ড’ বা নিয়তির সন্তান।
দ্য উইক ম্যাগাজিনের নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজার লেখায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিএনপি ভাঙার প্রচেষ্টার বিপরীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল এখনও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ৫৭ বছর বয়সী তারেক রহমান এখন তার মায়ের পথ অনুসরণ করছেন, কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার প্রচেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানকে একটি সুযোগ দিয়েছে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে রাজনীতি পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে তারেক রহমানের জন্য, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাকে সমর্থকরা ‘তারেক জিয়া’ নামে জানে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র। মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনা জেনারেল জিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পতন ঘটায়।
৫৭ বছর বয়সী তারেক রহমান এখন তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেওয়া পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ঢাকায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে, যদিও তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
“তারেক রহমান ইতোমধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করেছেন,” তার উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন। “চাকরি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষক, শ্রমিক বা শ্রমজীবী যেই হোক না কেন, আমরা তাদের সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিতে চাই,” বলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এবং তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়তে তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই।”
সব নজর এখন থাকবে এ দিকে যে, কতটা দক্ষতার সঙ্গে তারেক রহমান বাংলাদেশে নেতৃত্ব নিতে পারবেন যখন তিনি ঢাকায় ফিরে আসবেন। “তিনি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, এবং সামরিক-প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে তিনি ভবিষ্যতে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না। এটি ছিল তার রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন,” বলেন জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী।
১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক রহমান ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হন (তিনি তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান) এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবে তিনি বিএনপিতে প্রভাবশালী থেকে যান এবং দলকে একত্রিত রাখেন। “আওয়ামী লীগ সরকারের দল ভাঙার চেষ্টা সত্ত্বেও, তারেক রহমান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন,” বলেন আসিফ আলী।
২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার মায়ের কারাবরণের পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। “তারেক রহমান বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,” বলেন আসিফ আলী।
তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু পরে বেশ কম সক্রিয় ছিলেন, যদিও বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন এবং বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। এই সময় তিনি দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব অর্জন করেন।
২০০৭ সালে, ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং তারেক রহমান তার মায়ের সঙ্গে বন্দী হন। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে, অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়। তারেক রহমান ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য প্যারোলে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান।
বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানের জন্য একটি সুযোগ, যাতে তিনি তার পূর্বসূরিদের ধারা ভেঙে নিজস্ব উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেন। প্রশ্ন হলো, তিনি কেমন নেতা হবেন?
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta