চরক পূজায় হাজারো ভক্তের সমাগম, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো অনুষ্ঠান
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের সোনাকান্দর সার্বজনীন কালী ও দুর্গা মাতা মন্দির প্রাঙ্গণে বার্ষিক চরক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (১৪ এপ্রিল) দিনব্যাপী এই আয়োজন করে স্থানীয় দেবভক্তরা এবং শিব যুব সংঘ।
আয়োজক কমিটির তথ্য অনুযায়ী, প্রাচীন এই লোকজ উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয় পুরোহিতদের বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে। চড়ক দোলায় অংশগ্রহণকারী ভক্তরা পিঠে বরশি গেঁথে শূন্যে ভেসে ওঠার সময় দর্শনার্থীরা তাদের ঘূর্ণায়মান দৃশ্য উপভোগ করেন। এছাড়া, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্তরা এলাকা ভরিয়ে তোলে তাদের পদচারণায়।
চড়ক পূজায় অংশ নেন গোপাল রায় ও তার ছেলে সাগর রায়। তাদের চড়ক দোলার আয়োজন করেন সন্ন্যাসী ধীরেন। আয়োজকরা জানান, ৫ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে পূজা ও প্রার্থনার ১১ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, জামালপুর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক রমেশ সূত্রধর এবং আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চন্দ্র বর্মণ জানান, প্রায় সাত দশক ধরে সোনাকান্দর মন্দিরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং এবারের আয়োজনের ৬৭তম বছর।
চরক পূজাকে ঘিরে স্থানীয় পণ্যের দোকানগুলো মেলায় বসে, যা উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করে। অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সক্রিয়। সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. চাঁদ মিয়া জানান, “পূজার নিরাপত্তায় যথেষ্ট পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
ভক্ত শিবু বলেন, “প্রতি বছর আমরা মানত করে এই পূজায় অংশ নিই। পূর্ণতা লাভের বিশ্বাসে আমরা এই পূজা করি এবং সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করি।”
প্রসঙ্গত, বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তি হিসেবে পরিচিত। এই দিনে শিবের প্রতি ভক্তির নিদর্শন হিসেবে চরক পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা শিবের গাজন হিসেবেও পরিচিত। পূজায় অংশগ্রহণকারীরা চৈত্র মাসজুড়ে মন্দিরে অবস্থান করে সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। চরক পূজার বিশেষত্ব হলো, ভক্তরা পিঠে বরশি গেঁথে চরক গাছে ঝুলিয়ে ঘোরানো, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta