শজারুর আক্রমণে সংকটে কাশ্মীরের শত কোটি টাকার জাফরান শিল্প
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার পামপুরে শতাব্দীপ্রাচীন জাফরান চাষ বর্তমানে সংকটের মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি, পানির সংকটের পাশাপাশি নতুন এক বিপদ হিসেবে শজারু এসে যোগ হয়েছে কৃষকদের দুশ্চিন্তায়।
পামপুরের ৫২ বছর বয়সী জাফরান চাষি বশির আহমেদ ভোরে টর্চলাইট নিয়ে তার ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, 'এ যেন এক যুদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তন আর দামের পতন ছিলই, এখন শজারুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।'
জাফরান গাছের কন্দ মাটির নিচে থাকে, যা খেয়ে ফেলছে শজারু। আগে বনাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকা প্রাণীটি এখন মানুষের বসতিতে ঢুকে পড়েছে। কাশ্মীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, শজারু মাটির নিচে গর্ত করে কন্দ খাওয়ার কারণে শুধু ফলন নয়, মাটির গুণগত মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৯৯৭-৯৮ সালে পামপুর অঞ্চলে জাফরান উৎপাদন ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ টন, কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে মাত্র ২ দশমিক ৬ টনে নেমে এসেছে। আল-জাজিরার তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমছে। শজারুর কারণে গত দুই বছরে বশির আহমেদের প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছে।
এই শিল্পের সাথে যুক্ত প্রায় ৩২ হাজার কাশ্মীরি পরিবারের জীবিকা। জাফরান ব্যবসায়ী বিলাল আহমেদ বলেন, 'শুধু ৫ শতাংশ ফসল হারালেই ২৯ লাখ রুপি ক্ষতি হয়। এই অবস্থায় কাশ্মীরি কেশর বিলাসপণ্য হয়ে যাবে।'
স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। জৈব স্প্রে, বেড়া তৈরি, রাতের পাহারা—এই সব পদ্ধতিই একসময় ফলপ্রসূ হয়নি। কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, 'স্প্রে দিয়ে কিছুদিন কাজ হয়, তারপর শজারুরা আবার ফিরে আসে। এখন তারা আরও গভীর গর্ত করে কন্দ খাচ্ছে।'
গবেষক মীর মুসকান উন-নিসা বলেন, 'মাটি খোঁড়া থেকে রক্ষায় অন্তত পাঁচ ফুট গভীর তারের বেড়া কার্যকর হতে পারে। এছাড়া আলো-শব্দ সেন্সর বা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ভেবে দেখা যেতে পারে।' তিনি আরও বলেন, 'শজারুর জন্য পৃথক বাসস্থান গড়ে তোলা প্রয়োজন।'
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জহির আহমেদ বলেন, 'শজারুদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী যেমন বন্য কুকুর সংরক্ষণ করতে হবে। আফিম গাছ বা করলা জাতীয় উদ্ভিদের গন্ধে শজারু পালিয়ে যায়, সেসবও লাগানো যেতে পারে।'
তবে দীর্ঘমেয়াদে, শজারুদের প্রকৃতিবিরোধী আচরণের পেছনে রয়েছে বন ধ্বংস ও জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে, কেবল স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। ইরানের কেশরের ক্রোসিন মাত্রা ৬.৮২%, যেখানে কাশ্মীরি কেশরের পরিমাণ ৮.৭২%, যা অনেক উন্নত। উৎপাদন কমতে থাকলে, ইরান বাজারে আধিপত্য বাড়াবে এবং কাশ্মীরি জাফরান সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta