স্বস্তির বার্তা দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
বাংলাদেশ বর্তমানে মানি লন্ডারিংয়ের এক বড় শিকার। দেশের ব্যাংকিং খাতে কিছু পরিবার বা গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। গত ১৫ বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের বড় শিল্প গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষত, বেক্সিমকো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তবে, ছোট গ্রুপগুলোর বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি, বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি আরও বলেন, আমরা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, অর্থাৎ সমস্যা হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা জরুরি। সমস্যার সমাধান পরে করা যাবে, কিন্তু চুরি হওয়ার আগে ব্যবস্থা নেওয়াটাই প্রধান কর্তব্য। আমরা ভবিষ্যতে যাতে এমন কিছু না ঘটে, তার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও ব্যাংকিং খাতের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান। এই মতবিনিময়ে দেশের সব ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথমে আমরা সম্পত্তি ফ্রিজ করার চেষ্টা করবো। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, চিঠি পাঠাচ্ছি এবং ল ফার্মগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শিগগিরই আমরা হায়ার করব এস্টেট ট্রেসিং ফার্ম। এই প্রক্রিয়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে শুরু হবে এবং এটি হবে প্রথম সফলতা।
গভর্নর আরও বলেন, আমরা আদালতের মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমে টাকা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তার আগে আমাদের সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যদি আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য থাকে, তবেই সফল আলোচনা সম্ভব। না হলে আমরা ঠকে যেতে পারি।
তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ পুরোপুরি নতুন। এটি দেশের আইনের নয়, বরং বিদেশি আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা প্রথমে কোথায় কী আছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করব, তারপর সম্পত্তি ফ্রিজ করার পর আদালতের মাধ্যমে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে গভর্নর বলেন, আগে মুদ্রাস্ফীতি কম দেখানোর চেষ্টা হতো, কিন্তু বাস্তবে তা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। গত মাসে এটি ৮-৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। তিনি আশা করছেন আগামী বছর এটি ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অর্থ পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িত থাকার বিষয়ে গভর্নর বলেন, অমূলক তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে চাকরিচ্যুত করা উচিত নয়। যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে, তবে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। দুদক বা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য দিলে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পলিসি রেসপন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, সব রোগী একদিনে সেরে যায় না, সময় প্রয়োজন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি যাতে সারা দেশেই সঠিক সময়ে সুবিধা পৌঁছায়, কৃষক যাতে কোনো সমস্যা না হয়, বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা তা সম্ভব করতে পেরেছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জোবাইর হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মো. সালাহ উদ্দীন, মো. আরিফুজ্জামন, মো. আশিকুর রহমান ও স্বরুপ কুমার চৌধুরী।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta