জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা : ঐতিহাসিক প্রমাণ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বর্বর সামরিক অভিযান চালিয়ে নিরীহ বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করছিল, ঠিক তখনই মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঐতিহাসিক দলিলগুলো থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার ফলে সারা দেশে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা গভীর শ্রদ্ধার সাথে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি স্মরণ করেন এবং জানান, তার এই ঘোষণা জাতিকে হতাশা থেকে উত্তেজনায় পরিণত করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা জাগায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, বীর উত্তম তার বই ‘বাংলাদেশ অ্যাট ওয়ার’-এ এই ঘোষণা সম্পর্কে উল্লেখ করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি লিখেছেন, ‘২৫ মার্চ রাতে, নিজের কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে আলোচনা শেষে জিয়া সিদ্ধান্ত নেন তার ব্যাটালিয়নকে শহর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পুনর্গঠন করবেন এবং চট্টগ্রামে শক্তির কেন্দ্র তৈরি করবেন। সেখানে সৈন্যদের পুনরায় জড়ো করা হয়।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘সকল সৈন্য তখন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয় এবং ২৬ মার্চ বিকেল ৪টায় জিয়া তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান। পরে, তিনি ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো রেডিওতে ঘোষণা দেন। এতে তিনি শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানানোই নয়, নিজের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ঘোষণা দেন।’
শফিউল্লাহ আরও লেখেন, ‘২৭ মার্চ বিকালে, জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে আরেকটি ঘোষণা দেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী প্রধান সেনাপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি।’ জিয়াউর রহমান নিজেও তার স্বাধীনতার ঘোষণার কথা ‘বার্থ অব অ্যা নেশন’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে আমরা স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ করি।’ এই নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক বাংলা পত্রিকায় এবং ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় পুনঃপ্রকাশিত হয়।
মেজর জিয়া তার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘যখন আমি ব্যাটালিয়নে ফিরে আসি, তখন দেখি সব পাকিস্তানি অফিসার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। এরপর, বেসামরিক বিভাগের টেলিফোন অপারেটরকে ডেকে জরুরি বার্তা পাঠাতে বলি যে ৮ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করেছে।’ এই ঘটনা সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর বই ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ : অ্যা পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি’-তে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, ‘যতটা সম্ভব, আমি সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু সঠিক সময়ে খবর পৌঁছানো কঠিন ছিল। আমি ব্যাটালিয়নের অফিসার ও সৈন্যদের ডাকি এবং তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেই। তারা সবাই একযোগে আমার আদেশ মেনে চলে। তারপর আমি একটি সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করি।’
‘এটি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, রাত ২:১৫। একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেটি বাঙালির মনে চিরকাল থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো এই দিনটি ভুলবে না,’ জিয়াউর রহমান তার নিবন্ধে এমনটাই উল্লেখ করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে অস্ত্র হাতে লড়াইরত মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
ভারতীয় সাংবাদিক জ্যোতি সেন গুপ্ত তার বই ‘হিস্ট্রি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘মেজর জিয়া ২৬ মার্চ বিদ্রোহ করে এবং সন্ধ্যায় রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
মঈদুল হাসান তার বই ‘মূলধারা ৭১’-এ লেখেন, ‘মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন।’
এ কে খন্দকার তার বই ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’-এ উল্লেখ করেন, ‘মেজর জিয়া প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন, পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
এস আর মির্জা তার বই ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর : কথোপকথন’-এ বলেন, ‘২৭ মার্চ দুপুরে আমি স্পষ্ট শুনেছি, মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছিলেন।’
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সুখান্ত সিং তার বই ‘ইন্ডিয়াস ওয়ারস সিন্স ইন্ডিপেনডেন্স : দ্য লিবারেশন অব বাংলাদেশ’-এ লিখেছেন, ‘২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারে মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছিল।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta